হাইকোর্টের রায়ে বাকেরগঞ্জের ৪ শিশুর পরিবার খুশী

বরিশালের বাকেরগঞ্জে ধর্ষণ মামলায় ৪ শিশুকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে সেফ হোমে প্রেরণের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়ায় খুশী ভুক্তভোগী ৪ শিশু ও তাদের স্বজনরা। তারা এই রায় দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন।
উচ্চাদালতের এই রায় সংশ্লিষ্টদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে প্রত্যাশা সুশীল সমাজের। শিশু আইনের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের অজ্ঞতার কারণে এই ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করেন বরিশালের পাবলিক প্রসিকিউটর। অপরদিকে উচ্চাদালতের রায়ের কপি হাতে পেলে অভিযুক্ত পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন বরিশালের পুলিশ সুপার।
বাকেরগঞ্জের রূনসী গ্রামে ৬ বছর বয়সের এক প্রতিবেশী মেয়ে শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে গত বছরের ৬ অক্টোবর বাকেরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা যাচাই না করে পুলিশ ওই দিনই সাইদুল ইসলাম (১১), সোলায়মান ইসলাম তামিম (১০), হাফিজুল ইসলাম লাবিব (১০) এবং শাওন হাওলাদারকে (১০) গ্রেপ্তার করে বরিশাল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বাকেরগঞ্জ আমলী আদালতে প্রেরণ করে।
বিচারক মো. এনায়েতউল্লাহ শিশু আইন অনুসরণ না করে তাদের জামিন না মঞ্জুর করে যশোরের কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে প্রেরণের নির্দেশ দেন। দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা জোরজবরদস্তি করে শিশুদের প্রিজন ভ্যানে তুলে দেয়। তখন তাদের গগণ বিদারী আহাজারীতে ভারী হয়ে ওঠে আদালত অঙ্গনের পরিবেশ। ৮ মাস পর এখনও ঘুমের মধ্যে আঁতকে ওঠে শিশুরা। পুলিশের ভয়ে এখনও রাস্তায় বের হয় না তারা।
এ ঘটনায় গত রোববার উচ্চাদালতের দেয়া রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে দ্রুত রায় বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন শিশুদের স্বজনরা।
উচ্চাদালতের এই রায় থেকে সংশ্লিষ্টরা শিক্ষা নেবেন বলে প্রত্যাশা করেন বরিশাল সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদা।
বরিশাল জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, ধর্ষণ মামলা জামিন অযোগ্য অপরাধ। এই মামলায় জামিন দেয়ার এখতিয়ার নি¤œ আদালতের বিচারকের নেই। তার উচিত ছিলো শুনানীর জন্য শিশু আদালতে প্রেরণ করা। শিশু আইনের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের অজ্ঞতার কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করেন বরিশাল জেলা জজ আদালতের এই আইন কর্মকর্তা।
এদিকে উচ্চাদালতের রায়ের কপি পেলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন বরিশালের পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন।
গত রোববার উচ্চ আদালত এক ঐতিহাসিক রায়ে ওই ধর্ষণ মামলাটি বাতিল করেন। এছাড়া শিশু আইন অনুসরণ না করায় সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটের ফৌজদারী এখতিয়ার প্রত্যাহার এবং দায়িত্ব অবহেলার দায়ে বাকেরগঞ্জের তৎকালীন ওসি আবুল কালাম, উপ-পরিদর্শক বশির উদ্দিন ও উপজেলা প্রবেশন কর্মকর্তা আবু তাহেরকে সাময়িক বরখাস্ত করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট সচিবদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে আদেশে।